- নিম্নমানের ভারতীয় বীজ দিয়েছে মাইক্রো ইকো ফার্ম
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাইক্রো ইকো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান উপপরিচালকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা অত্যন্ত নিম্নমানের ও কৃষিকাজের জন্য অনুপযুক্ত বীজ সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের বীজ ব্যবহারে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, যা কৃষকদের উৎপাদন ও জীবিকাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত সময়ে বীজ দিতে না পারলেও ডিএই-এর সরেজমিন উইং-এর অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন সচিবের নাম ভাঙিয়ে সংসিøষ্ট ডিডিদেরকে নির্ধারিত সময়ের পরে জুলাই মাসে বীজ যাতে গ্রহণ করে সেই চাপ দিচ্ছেন। তিনি সংসিøষ্টদের বলছেন, সচিব স্যার বলেছেন জুলাই মাসে মাল নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করে থাকে। আগে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমেই সব বীজ সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এবার ডিএই সরাসরি পেঁয়াজের বীজ ক্রয় করছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ২২শ’ টাকা দরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই বীজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট গড়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন ডিএই এর ড. মো. জামাল উদ্দীন। এই কর্মকর্তা বঙ্গ এগ্রোটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কারণে বঙ্গ এগ্রোটেক নির্ধারিত সময়ে বীজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর শর্ত অনুযায়ী কার্যাদেশ বাতিল না করে পরবর্তী অর্থ বছরের জুলাই মাসেও যাতে সরবরাহ নেওয়া হয় সে জন্য তার অধিনস্থ সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার জন্য সাড়ে তিন টন বীজ ক্রয়ের কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, তারা নির্ধারিত সময়ে বীজ সরবরাহ পাননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রাণী সরকার টেলিফোনে জানান, নির্ধারিত সময় শেষ হলেও তারা এখনো বীজ সরবরাহ পাননি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ এগ্রোটেকের লোকজন জানিয়েছে সমস্যার কারণে তারা বীজ আনতে পারেনি। খুব শিগগিরই সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে। অর্থবছর শেষ হয়েছে এখন বিল কিভাবে দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত না দিয়ে আইবাস খরচ দেখিয়ে জমা রাখা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার আইবাস করার এখতিয়ার নেই।
এদিকে ঠাকুরগাঁও ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাইক্রো ইকো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত নিম্নমানের ও কৃষিকাজের জন্য অনুপযুক্ত বীজ সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকার নির্দেশিত জিও-এর উল্লেখিত ৬ নং অনুচ্ছেদে যে সকল বৈধ কাগজপত্র ও অনুমোদনপত্র প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বাধ্যতামূলক তা অনুসরণ করেনি। জিওতে বলা আছে পেঁয়াজ বীজের গুণগতমান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে, বীজ প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কিত তথ্যাদি, যেমন: উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্স গ্রহণ: যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনিটরিং ও ফাইটো স্যানিটারি (পিসি) সার্টিফিকেট গ্রহণ: উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের তথ্যাদি এবং বীজ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারক কর্তৃক বীজ আমদানির বৈধ লাইসেন্স, অভিজ্ঞতার সনদ, পণ্যের বিবরণসহ এলসির কপি ও আমদানি সংক্রান্ত শর্তাবলি পরিপালনসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তুু মাইক্রো ইকো ফার্ম এসব নিয়ম মানেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম লঙ্ঘন করে বীজ সরবরাহ করছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও ডিএই-এর একজন কর্মকর্তার অলিখিত ব্যবসায়িক পার্টনার বলে জানা গেছে। এ ধরনের অনিয়ম ও অবৈধ কার্যক্রম শুধু কৃষি ব্যবস্থাকেই নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। একটি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ে বীজ না কেন দিতে পারেনি এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের বীজ দেওয়ার যে অভিযোগ সঠিক কি না তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।